দুই বাংলার থ্রিলারে সাম্ভালার প্রভাব

বাংলা সাহিত্যে ২০১২ সালে দুইটা সিগনিফিকেন্ট ঘটনা ঘটে। হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু। আর শরিফুল হাসানের “সাম্ভালা” প্রকাশিত হয়। নিয়মিত থ্রীলার পাঠক ছাড়া বইটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছে সবারই। এমনকি এখনো বাংলা সাহিত্যের বাজারে থ্রিলারের কাটতি একদম উপরের দিকে থাকলেও তাকে ঠিক সাহিত্যের কাতারে এখনো ফেলা হয়না। সাহিত্যের লেখকের ইমপ্যাক্ট দেখার জন্যে যে ১৫-২০ বছর যে অপেক্ষা করতে হয় এবং লেখকরা যে সাধারণত বুড়ো বয়সের আগে আসলে কোন রিকগনিশন সচরাচর পান না, সেই সাথে তা যদি হয় থ্রিলার এটা বাংলা সাহিত্যে আরো বড় আকারে সত্য।
এই সময়টা গুরুত্বপূর্ণ আরো এক কারণে। হুমায়ুন আহমেদের মোহ থেকে বাংলা ভাষায় পাঠক তখনো মজে রয়েছেন। বাংলা ভাষায় থ্রিলার বলতে আনোয়ার হোসেনের লেখা ট্রান্সলেট করা “মাসুদ রানা”। সেবা ছাড়া আর কোন প্রকাশনীই বাংলায় থ্রিলার বের করছেনা। মোহাম্মদ নাজিমউদ্দীন তখনও টুকটাক চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন সেবার প্রকাশনীর বাইরে থ্রিলার নিয়ে কাজ করার। সেই সময়ে বের হওয়া “সাম্ভালা” যে বাংলা ভাষায় Non-linear narrative আর নতুন একটা Genre নিয়ে আসবে সেটা কে ভেবেছিলো!
এই Non-linear narrative বা Split timeline টেকনিক ২০১২ সালে বাংলা থ্রিলার Genre তে একদমই নতুন ছিলোনা। কিন্তু সেটা আমরা মাসুদ রানাতেও ২-১টা জায়গায় হয়তো ছিটেফোঁটা খুঁজে পাবো। কিন্তু গোটা বইয়ের রহস্যের সাথে এভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এমন কাহিনী আমার জানামতে “সাম্ভালা” তেই প্রথম। এবং তার ইম্প্যাক্ট এখন বাংলা মৌলিক থ্রিলারে এখন এতোটাই বেশী, বড় আকারের কোন উপন্যাস এখন Split timeline ছাড়া চিন্তাই করা যায়না। রবিন জামান খানের “সময় উপাখ্যান” সিরিজের প্রতিটা উপন্যাসই Mythology, Fantasy আর Historical thriller. এবং প্রতি বছর এই উপন্যাসগুলোর কোয়ালিটি আরো বাড়ছে। ২০২৫ এ এসে এখন সাম্ভালাকে এই বইগুলোার তুলনায় খুবই সাদামাটা মনে হতেই পারে।
এবার আসি “সূর্যতামসী” ট্রিলজির ব্যাপারে। খুবই চমৎকার কাহিনী। প্রথম বইটায় বেশ সমস্যা থাকলেও, পরের বইতে সেটা উতরে গিয়েছেন চমৎকারভাবে। Fantasy mystery, Historical thriller দুই ক্যাটাগরিতেই ফেলা যায়। চমৎকারভাবে দুই সময়ের একটা ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেছেন। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের লেখা, পড়ায় খুব একটা আরাম পাইনি তা বলাই বাহুল্য। বিশেষত কলকাতার বিভিন্ন অংশের অহেতুক বর্ণনা বরং বিরক্তির ই উদ্রেক করেছে, যেটা কিনা আবার কলকাতার মানুষজন হয়তো পছন্দ করবে। “সাম্ভালা” বইটি পশ্চিম বঙ্গেও ছাপানো হয়েছিলো এবং সেখানেও থ্রিলার মহলে বইটির জনপ্রিয়তা রয়েছে।
২০০০ সালে Dan Brown এর “Robert Langdon” সিরিজের ইফেক্ট বাংলা ভাষায় পড়ার কথাই ছিলো। সেটা কিরূপে আবির্ভুত হয় সেটাই ছিলো প্রশ্ন। ২০১২ সালের সাম্ভালার মাধ্যমে শরিফুল হাসান এই Fantasy Mystery genre কে বাংলা ভাষায় নিয়ে আসেন। আর ২০২০ সালে প্রকাশিত সূর্যতামসি সিরিজের মাধ্যমে তা পশ্চিম বাংলায় প্রবেশ করলো। কিন্তু সূর্যতামসীতে আমি Robert Langdon দেখিনি, সাম্ভালা ই দেখেছি।