রিডিং বিটুইন দা লাইনস - বই রিভিউ

জুন মাসের ২৩ তারিখে লেখক ইমরুল হাসান তার ফেসবুক প্রোফাইলে জানাইলেন যে, উনি ওনার বই রিভিউগুলা নিয়া একটা বই পাবলিশ করতে চান। প্রথমে সফটকপি বিক্রি করবেন শুইনা আগ্রহ লাগলো। আগ্রহের আরো কিছু কারণ আছে। প্রথমত, ওনারে আমি ফেসবুকে খুব বেশীদিন হইলো ফলো করিনা, মেইনলি ৫ তারিখের পর থেইকা ই ফলো করা শুরু, এবং ব্যক্তিগত ভাবে ওনার রাজনৈতিক ফিলোসফির সাথে আমি নিজেরে কিছুটা মেলাইতে পারতেসিলাম। তার মানে বইয়ের পাতা উল্টাইতে যাইয়া মাথা গরম হইয়া যাওনের সুযোগ কম বলেই মনে হইসে। দ্বিতীয়ত ওনার লেখার ধরন। উনি প্রোগ্রামগুলায় যেভাবে কথা বলেন, লেখেন ও সেই একই ভাষায়। আলগা শুদ্ধ মারাইতে যান না। এবং এই যে শুদ্ধিকরণ করতে যান না, এইটা আমার কাছে ভালো লাগে। রাজনৈতিক ভাষায় যদি বলি, কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা থেকে আমরা বের না হইতে পারলে আমরা আমাদের রাজনীতিরে জবান দিতে পারবোনা, এবং আমাদের রাজনীতিকে কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবিদের কবল থেইকা মুক্ত করতে পারবোনা।
বইয়ের ব্যাপারে আসি, বইটা মূলত বিভিন্ন সময়ে ওনার পড়া ৩৪ টা বইয়ের রিভিউ। এই রিভিউগুলার মাধ্যমে উনি মূলত বই (ননফিকশন) কেমনে ক্রিটিকালি পড়া লাগবে, সেটা বুঝানোর চেষ্টা করসেন। এবং আমার মনে হয় সেইটা উনি ভালোমতোই পারসেন। পড়তে যাইয়া আমরা যদি আসলে লেখকের কথারে ১০০ তে ১০০ সত্য বইলা ধইরা নেই এবং সেটার সাথে তার রাজনৈতিক আর দার্শনিক মতাদর্শ আমলে না নেই তাইলে যে সত্যের কাছাকাছি যাওয়া কঠিন হইয়া যায়, সেটা মূলত ভালোমতোই তুলে ধরসেন।
কারো সাথে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কাছাকাছি থাকলে একটা বড় সুযোগ থাকে তার থেকে বইয়েরস সাজেশন নেওয়ার। এই বইটা তো মোটামুটি সেই ধরণের একটা ভান্ডার। এই জন্যে মনে হয় বইটা ভালো লাগসে আরো বেশী।
ইমরুল হাসানের ব্যাপারে আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা উনি বামপন্থীদের ব্যাপারে খুব ক্রিটিকাল, এইটার কোন রাখঢাক উনি করেন না কোথাও, এই বইয়েও সেটা উপস্থিত। বামদের লেখা বইগুলোর সমালোচনায় উনি খুবই শক্তভাবে তাদের চাপাবাজি আর সত্যগোপনের ব্যাপারগুলো হাইলাইট করসেন।
আরেকটা জিনিস এখন আমার মনে হচ্ছে বইপড়া মানে একটা মানুষের চিন্তা-চেতনা, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আপনি পড়তেসেন, আপনার জীবনের একটা বড় সময় আরেকজনের চিন্তা বুঝতে ব্যয় করতেসেন, এই জন্যে এই সময়ক্ষেপনটা যাতে কখনো অপচয় বোধ না করেন, তার জন্যে বই পড়ার আগে বইটা প্রকাশকাল, কনটেক্সট, লেখকের রাজনৈতিক আইডিয়া, বই লেখার সময়কালে তার আইডিয়া নিয়া শুরু করলে আপনি ভালো করবেন। একটা মানুষ বয়সের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ফেজের মধ্য দিয়া যায় তার পারিপার্শিক পরিবেশের উপরে ভিত্তি করে। সত্তরের দশকের আল-মাহমুদ আর নব্বইয়ের আল মাহমুদ সেম না। উনি একটা বিস্তর রাজনৈতিক পরিবর্তেনের মধ্য দিয়া গেছেন। ১৯৫০-৬০ এর নেয়াম চমস্কি আর ২০০০ সালের পরের চমস্কি তো আলাদা, তাইনা। একজন লিনগুইস্টিক থিওরিস্ট হয়ে গেছেন পলিটিকাল রাইটার আর একটিভিস্ট। তাই কনটেক্সট সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
হাস্যকর ব্যাপার হইসে উনি “অসমাপ্ত আত্মজীবনী”র একটা রিভিউ করসিলেন ২০১২ সালে। এইটা চ্যাপাটারটা আমি চোখ বুলায়া গেসি কেবল, পড়ার রুচি হয়নাই। কারণ বইটা তো আসলে মুজিব চোট্টা লেখে নাই, ডাইনিটা আরেক চোট্টারে দিয়া লেখাইসে। এখানেও যদি আমরা কনটেক্সট দেখি, ২০১২ সালে তো ওনার পক্ষে জানা সম্ভব ছিলো না যে এইটা এক চোট্টার লেখা। তো এই চ্যাপ্টারটা আসলে উনি যখন বইটা ছাপাইবেন বাদ দিয়ে দিলেই ভালো করবেন মনে হয়।