নির্বাচন ২০১৮

দেশ নিয়ে আশা করা ছেড়ে দিয়েছিলাম অনেক আগেই। এদেশে এতো বেশী পরিমাণ মানুষ অসৎ যে, এখান থেকে কোন কাজ ঠিকভাবে করার কিংবা কাজকর্ম ঠিকভাবে পরিচালিত করার কোন সুযোগ ই নেই। এখানে সৎ মানুষরা প্রতিনিয়ত অসম্মানিত হন, খারাপ মানুষের মর্যাদা সবচেয়ে বেশী। এক বিরাট অংশের মানুষের মাঝে হিউমিলিটি বলতে কিছু নেই, নিজেকে সবসময় অনেক বড় কিছু মনে করে। জ্ঞানের কোন মূল্য নেই এখানে, কে কাকে মেরে ধরে খেতে পারে তাই নিয়ে সবাই ব্যস্ত। ছোটবেলায় যে “অসির চেয়ে মসী বড়” পড়েছিলাম, সেটা অন্য অনেক দেশের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে, কিন্ত বাংলাদেশে নয়। এখানে আপনি অন্যজনকে দলে-মুচড়ে উঠে যেতে পারলে আপনি অনেক বড় মানুষ, সবাই আপনাকে স্যার স্যার করবে। এ এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা।

২০১৩ তে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। আমার এক কাজিনের বাসায় বসে আলাপ করছিলাম। উনি কত সচ্ছন্দেই না বলে দিলেন, “তুমি মাঠে পাওয়ার না দেখাতে পারলে, কিসের রাজনীতি করলা?” নির্বাচন কি আসলে “পাওয়ার দেখানোর জায়গা” হওয়ার কথা ছিলো। নাকি ভোটের মাধ্যমে একদল মানুষ নির্বাাচিত হওয়ার কথা ছিলো, যারা মানুষের জন্যে কাজ করবে।

এইতো কয়েক মাস আগেই তো তুরষ্কে নির্বাচন দেখলাম আমি। জায়গায় জায়গায় কিছু বুথ করে তারা নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছিলো। মাঝে মধ্যে কিছু গাড়িতে গান বাজানোর মাধ্যমে তারা নিজ দলের প্রচারণা চালাতো। পরের দিন নির্বাচন, কিন্ত আপনি আগের দিনও টের পাবেন না যে, কিছু হচ্ছে। মানুষের জীবনযাত্রা একদম নরমাল, সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। নির্বাচনের দিন সবাই নিজ নিজ সময় সুযোগ মতো যেয়ে ভোট দিয়ে চলে আসলো। প্রায় ৬ কোটি ভোটারের মধ্যে ৮৬% মানুষ ভোট দিয়েছে ঐদিন। রাতের বেলা যখন AKP জিতলো, তখন তাদের আনন্দ মিছিল বের হলো। কি যে উল্লাস মানুষের মধ্যে! পরিবারের সবাই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে শহরের সেন্টারে একত্রিত হলো, পুরো রাস্তা হর্ণ বাজাতে বাজাতে। সবার হাতে জাতীয় পতাকা, চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। রাজনৈতিক বুঝ হওয়ার পরে বাংলাদেশে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেখিনি। এখানে এসে দেখলাম নির্বাচন কাকে বলে, মানুষের শক্তি কাকে বলে। এমন একটা আনন্দময় নির্বাচনের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঐদিন শহর থেকে ডর্মে ফিরে আসলাম। চোখে পানি চলে এসেছিলো সত্যিই ঐদিন, আমার দেশের মানুষ এমন দিন দেখতে পারলোনা। এমন আনন্দ কখনো উপভোগ করতে পারলোনা। হায়রে আমার বাংলাদেশ।

এদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মূল কারণ, আমাদের চুরির স্বভাব। আমরা জানি যে, অন্য দল সরকারে থেকে নির্বাচন করলে সিওরলি চুরি করবে, তাই গতবার বিএনপি ইলেকশনে যায়নি, এই সুযোগে আওয়ামি লীগ আরো কয়েকটা বছর কাটিয়ে দিলো এভাবেই। এবারেও আওয়ামি লীগের আন্ডারে নির্বাচন হচ্ছে। বাকি সব ইস্যু বাদ দেই। জাস্ট কয়েক মুহূর্তের জন্যে একটু নিরপেক্ষ হওয়ার চেষ্টা করুন না নিজের মনে। আওয়ামি লীগ অনেক “স্ট্রাকচারাল উন্নয়ন” করেছে মেনে নিলাম, এতো উন্নয়ন করলে তাদের একটা সুষ্ঠু ভোট আয়োজন করতে ভয় কোথায়? নায়ক-নায়িকা-খেলোয়াড়রা তো সব আওয়ামি লীগের জন্যে ভোট চাইছে, নিশ্চয়ই তারা অনেক ভালো কাজ করেছে গত ১০ বছর। তাহলে তারা যেহেতু নির্বাচন আয়োজন করছেই, সেটা সুন্দর মতো হতে দিতে সমস্যা কোথায় ? কেনো অন্য দলের মানুষগুলের উপরে এতো জুলুম-নির্যাতন চালাতে হবে? আমার বিপরীত দলের লোক যেহেতু, তাই তাকে মেরে হাড়-গোড় ভেঙে দিতে হবে ? কেনো ? আপনারা এতো ভালো কাজ করলে, জনগণের উপরে আপনার বিশ্বাস নেই কেনো? এই জনগণ তো আপনাদের ২০০৮ এ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলো, তাদের উপরে আপনাদের এতো অবিশ্বাস কেনো? আপনারা তো অনেক উন্নয়ন করেছেন দেশের, তো নিজেদের কার্যক্রমের নিজেদেরই এতো আত্মবিশ্বাসহীনতার কারণ কি বলবেন প্লীজ ?

শেষ কয়েকটা কথা তরুনদের জন্যে। দুনিয়া আমাদের জন্যে অনেক বড় তাইনা, সারা দুনিয়ার সব খবর জানছি আমরা মুহূর্তের মধ্যে। সো, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও তো আরো বড় হওয়া উচিত, তাইনা ? এই তরুন প্রজন্মের তো সততার জ্ঞান আরো বেশী হওয়া উচিত ছিলো, মানুষের জীবনের মূল্য বোঝা উচিত ছিলো। এই প্রজন্মই না সহপাঠী বাস চাপায় মারা যাওয়ায় “ছাত্র আন্দোলন” শুরু করলো? সেই ছাত্র আন্দোলনকে কারা নির্মমভাবে দমন করলো তা কি ভুলে গিয়েছে কিশোর-তরুনরা? কয়েকদিন পরে নির্বাচন হবে, তার আগে এভাবে যে বিরোধী দলগুলোর উপরে তুমুল দমন-নিপিড়ন চলছে, তা কি আপনাদের চোখে পড়ছেনা? PewDiePie থেকে একবার দেশের দিকে তো তাকান আপনারা, দেশের জন্যে একবার চিন্তা করুন আপনারা। এতো এতো A+ পেয়ে আসা তরুণদের মধ্যে যদি নূন্যতম বিবেচনাবোধ না থাকে, তাহলে তার মূল্য কি?